Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ক্যাপসিকাম চাষে জীবিকার পথ পেয়েছেন রূপসার নাজিমউদ্দিন

ক্যাপসিকাম চাষে জীবিকার পথ পেয়েছেন রূপসার নাজিমউদ্দিন

মোঃ আবদুর রহমান

করোনা মহামারির ফলে মানুষের উপার্জন কমেছে। এতে গত এক বছরে কাজ হারিয়েছেন প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষ। কর্মহীন মানুষের আয় নেই। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন ও জীবিকা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে মানুষ টিকে থাকার লড়াই করছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য এসব কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা আবশ্যক ।


উল্লেখ্য, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উচ্চমূল্যের ফসল ক্যাপসিকাম চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত করোনায় কর্মহীন বেকার যুবক মোঃ নাজিম উদ্দিন (৩৫)। তিনি এবছর ২০ শতক জমিতে  ক্যাপসিকাম চাষ করে প্রথমবারই সফল হয়েছেন। রূপসা উপজেলার নৈহাটি গ্রামে তার বাড়ি। তিনি এলাকায় এখন বেকার যুবকদের কাছে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।  


নাজিমউদ্দিন একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। মহামারি করোনার সময় এ চাকরি থেকে অব্যাহতি পেয়ে তিনি বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ও এলাকার এক কৃষকের ক্ষেত দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজদিয়া গ্রামে ২০ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেন। উচ্চমূল্যের এ ফসল চাষ করে স্বল্প সময়ে অধিক ফলন ও ভালো দাম পেয়ে জীবিকা নির্বাহের পথ খুঁজে পেয়েছেন নাজিমউদ্দিন ।


সরেজমিন ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, তার প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ, বেগুনি, হলুদ আর লাল রঙের ক্যাপসিকাম। ক্ষেতজুড়ে দৃষ্টিনন্দন এই মিষ্টিমরিচ দেখে খুশিতে ভরে উঠছে          কৃষকের মন। অধিক ফলনের আশায় ক্যাপসিকাম ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক নাজিম উদ্দিন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন তিনি। নাজিমউদ্দিন বলেন, মাঝারি উঁচু প্রকৃতির দো-আঁশ মাটি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য নির্বাচন করতে হয়। চারা রোপণের আগে জমিতে ৩/৪টি চাষ ও মই দিয়ে আগাছামুক্ত ও সমতল করে জমি তৈরি করে ২ হাত  চওড়া বেড করে নিতে হবে। পাশাপাশি দুই বেডের মাঝে ৩০ সেমি. চওড়া ও ১৫ সেমি. গভীর সেচনালা থাকবে। ক্যাপসিকাম চাষের জন্য ২০ শতক জমির বেডে ১৬ কেজি ইউরিয়া, ১৮ কেজি টিএসপি, ১২ কেজি এমওপি, ১২ কেজি জিপসাম ও ১.০ কেজি দস্তা সার প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। আগাছা দমন, আর্দ্রতা সংরক্ষণ ও সারের অপচয় রোধের লক্ষ্যে বেডের ওপর পলিথিনের মালচিং পেপার বিছিয়ে দিতে হবে। তারপর বেডের ওপর ৫০ সেমি. দূরে দূরে সারি করে প্রতি সারিতে ৪৫ সেমি. পর পর ৩০ দিন বয়সের আড়াই হাজার ক্যাপসিকাম চারা পৌষ মাসে রোপণ করা হয়। ঠান্ডা থেকে চারা রক্ষার জন্য  পলিথিনের শেড দিয়ে চারাগুলো ঢেকে রাখা হয়।


কৃষক নাজিম উদ্দিন আরো বলেন, ক্যাপসিকামের ভালো ফলনের জন্য ইউরিয়া ও এমওপি সার দু’ভাগে ভাগ করে চারা রোপণের ২৫ দিন পর প্রথম এবং ৫০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তিতে উপরিপ্রয়োগ করা হয়েছে। প্রতি কিস্তিতে ২৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ২০ গ্রাম এমওপি সার গাছের গোড়া থেকে ১০-১৫ সেমি. দূরে চারদিকে উপরিপ্রয়োগ করে ছোট কোদাল দিয়ে হালকাভাবে কুপিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবার সার উপরিপ্রয়োগের পর গাছের গোড়ায় ঝাঝরি দিয়ে পানি সেচ দিতে হবে। তাছাড়া মাটিতে রসের অভাব হলে ক্যাপসিকাম গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি দিতে হবে। মালচিং পেপার ব্যবহারের কারণে ক্ষেতে আগাছার উপদ্রব অনেক কম হয়েছে বলে নাজিমউদ্দিন জানান। তিনি বলেন, সাদামাছি পোকার আক্রমণ থেকে ক্যাপসিকাম গাছের পাতা রক্ষার জন্য পেগাসাস-৫০ এসসি (১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি. হারে) এবং পাতার অ্যানথ্রাকনোজ রোগ  প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রথমে নোইন-৫০ ডব্লিউপি (১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম হারে) তারপর অরোজল-৫ এসসি (১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি লিটার হারে) নামক ছত্রাকনাশক ক্যাপসিকাম ক্ষেতে নিয়মিত স্প্রে করা হয়েছে।


এভাবে কৃষক নাজিমউদ্দিনের হাতের ছোঁয়া আর যত্ন পরিচর্যায় ক্যাপসিকামের চারাগুলো হয়ে উঠেছে হৃষ্টপুষ্ট। চারা রোপণের দু’মাস পর থেকেই গাছে ফল ধরা শুরু হয়। এই ২০ শতক জমিতে ক্যাপসিকাম চাষে বীজ ক্রয়, জমি প্রস্তুত, সার, বালাইনাশক ও মালর্চিং পেপার ক্রয় এবং শেড তৈরিসহ সবমিলিয়ে তার প্রায় ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যদিও নিজেরা কাজ করায় এর মধ্যে শ্রমিকের খরচ লাগেনি। চারা রোপণের দুই মাস পর থেকে তিনি ক্যাপসিকাম বিক্রি শুরু করেছেন। এক্ষেত থেকে তিনি ৫০০ কেজি ক্যাপসিকাম উৎপন্ন করে তা পাইকারি বাজারে ১৫০ টাকা কেজি হিসেবে মোট ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তার উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৫৩ হাজার টাকা লাভ হয়েছে বলে তিনি জানান।


বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বেকার ও অলস সময় অতিবাহিত না করে যাদের সামান্য জমি আছে, তাতে ক্যাপসিকামসহ বিভিন্ন লাভজনক সবজি আবাদ করে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন, এতে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি সবজি বাজারে বিক্রি করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য আনা সম্ভব।


রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ ফরিদুজ্জামান বলেন, ক্যাপসিকাম উচ্চমূল্যের একটি নতুন ফসল। এ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে এ ফসল চাষ করে সাফল্য লাভ করেছেন তরুণ ও বেকার যুবক নাজিমউদ্দিন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বাজারে দাম ও চাহিদা ভালো হওয়ায় এ উপজেলায় আগামীতে ক্যাপসিকামের চাষ আরো বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।


ক্যাপসিকাম এ দেশে সবার কাছে মিষ্টিমরিচ নামে পরিচিত। এ মরিচের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে সাধারণত এর ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়। ক্যাপসিকাম সবুজ, লাল, হলুদ, ও বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। এ মরিচ ঝাল নয়, আবার চিনির মতো মিষ্টিও নয়। মরিচের ঘ্রাণ আছে। তাই সালাদের জন্য এ মরিচ খুবই উপযুক্ত। ক্যাপসিকামে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও জিংক রয়েছে। এর কাঁচা ফল সালাদ হিসেবে খুবই মুখরোচক ও পুষ্টিকর। তাছাড়া ক্যাপসিকাম রান্না করে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।
পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার পাশাপাশি ক্যাপসিকাম দেহের রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ক্যাপসিকামে থাকা ভিটামিন এ, সি এবং বিটা ক্যারোটিন চোখ ও ত্বককে ভালো রাখে। এ ছাড়া এটি লাইকোপেন সমৃদ্ধ হওয়ায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগ দূর করে। ক্যাপসিকাম দেহের বাড়তি ক্যালরি পূরণে সহায়তা করে। ফলে দেহে উচ্চচর্বি জমে না, একই সাথে ওজনও বৃদ্ধি পায় না। এতে ক্যাপসাইসিনস নামে একটি রাসায়নিক উপাদান থাকে যা ডিএন এর সাথে যুক্ত হয়ে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের সংযুক্ত হওয়াতে বাধা দেয় । এভাবে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। ক্যাপসিকামে অ্যালকালোয়েড, ফ্লেবোনয়েড, ক্যানিন ইত্যাদি পাওয়া যায়। অ্যালকালোয়েড সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি অ্যান্টি-ইনফ্লামেটোরি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। আর এর ক্যানিন আন্ত্রিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ক্যাপসিকাম হজমে সাহায্য করে। মাইগ্রেন, সাইনাস, ইনফেকশন, দাঁতেব্যথা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস ইত্যাদি ব্যথা দূর করতেও এটি কাজ করে। ক্যাপসিকাম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতেও কার্যকর এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থির রাখে। এটি রক্তের অনুচক্রিকা উদ্দীপিত করে সংক্রমণ রোধ করে থাকে।


প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেয়া ছাড়াও লাভজনক ও অর্থকরী ফসলের মধ্যে ক্যাপসিকাম অন্যতম। আমাদের দেশে বিভিন্ন শপিংমল, ফাস্টফুড ও চাইনিজ রেস্টুরেন্টসহ অভিজাত হোটেলগুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া ক্যাপসিকাম বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনাও প্রচুর। এর চাষ করে অনেক ফসলের তুলনায় কম সময়ে বেশি লাভ করা যায়। তাই দেশের বেকার যুবকদের ক্যাপসিকাম চাষের ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া একান্ত প্রয়োজন। এতে আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান হবে এবং দেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল হবে।

লেখক : উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি অফিস, রূপসা, খুলনা। মোবাইল: ০১৯২৩৫৮৭২৫৬, ইমেইল: rahman.rupsha@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon